আনোয়ার ভাই। আমাদের মসজিদের সাথী। আমরা সাথী বলি মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত ভাইদেরকে। আপনারাও আমার সাথী।
পেশায় একজন ছোটখাটো চাকুরীজিবী। ১২ বছরের বিবাহিত সংসার। ৯ বছর বয়সী একটি
কন্যা ও ৪ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান। বেশ সুখেই সংসার কেটে যাচ্ছে
আলহামদুলিল্লাহ।
প্রথম তিন দিন আল্লাহর রাস্তায় সময় ব্যয় করার পর
থেকেই আনোয়ার ভাইয়ের জীবন অভ্যস্ত হতে থাকে আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশিত
পথ অনুযায়ী। পুরোপুরি সন্নতের উপর উঠার চেষ্টা করলেন, অনেকাংশে সফলও হলেন।
মাত্র তিন দিনে এত পরিবর্তন ?? আসলে তিন দিন, ৪০ দিন, ১২০ দিন, আলেম,
শায়খ, হাজ্বী হওয়া সফলতার পরিমাপক নয়। আল্লাহ তায়ালা যাকেই নেক আমাল করার
তৌফিক দান করবেন সেই সৌভাগ্যবান।
“ কু-আনফুসাকুম ওয়া আহলিকুম নার “-নিজে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো, পরিবারবর্গকেও বাঁচানোর চেষ্টা করো।
চেষ্টা শুরু করলেন পরিবারের পিছনে।
বিভিন্ন মজলিশে শোনা ঈমানী কথাগুলি, সাহাবা আজমাঈনদের ঘটনা গুলি বাসায় গিয়ে প্রিয় মানুষটির সাথে বলতেন , শোনাতেন।
প্রিয় মানুষটিও তন্ময় হয়ে শুনতেন, সঙ্গ দিতেন । সহজ সরল গ্রাম্য বধুটির
অন্তরের দানা বাধা ঈমানের বীজটি ক্রমেই সম্প্রসারিত হয়ে ডালপালা গজাতে
লাগলো। ঈমানের স্বাধে আস্বাদিত হতে লাগলো দৈনন্দিন আামলগুলি। সাপ্তাহিক
তালীম, ঘরে তালীম, দৈনন্দিন আমালে উন্নতি আসতে শুরু করে।
ছোট
ছেলেটাকে কোরআন শিখানোর সাথে সাথে নিজের কোরআনটাকেও সহী করার নিয়ত করতে ভয়
পাননি। আনোয়ার সাহেবকে সাথে নিয়ে এ মাসের ২৬-২৮ (এপ্রিল-২০১৪) তারিখে
মাস্তুরাত জামাতের নাম লিখিয়ে এসেছেন প্রথম বারের মত জামাতে যাবেন বলে।
আনোয়ার ভাইও খুশি হলেন।
গত কয়েক দিন আগের কথা হঠাৎ শরীরের তাপমাত্র
বাড়তে থাকলো, খাবার-দাবারে এতটুকুনও রুচি নেই। ক্রমেই দুর্বল হয়ে পরলেন
আনোয়ার ভাইয়ের স্ত্রী। আনোয়ার ভাই পেরেশানীতে পরে গেলেন ঢাকা মেডিকেল ,
সোহরাওয়ার্দী, পিজি সব জায়গাতেই ঘোরাঘুরি করে সবশেষে ইবনে সিনায় কিছুটা
স্বস্তি পেলেন। আইসিইউ ( ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট - নিবিড় পর্যবেক্ষন
কেন্দ্র) তে থাকার পর কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসলেন ডাক্তারের
পরামর্শক্রমে ।
আলহামদুলিল্লাহ! সবার মনে আনন্দের ঝিলিক।
কিন্তু,
সপ্তাহ না পেরোতেই আবারও সেই পূর্বের অবস্থা । গত দু‘দিন আগের কথা সকালে
বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছিলেন না । আনোয়ার ভাই ধরে উঠালেন স্ত্রীকে; পানি পান
করালেন নিজ হাতে । কালেমার কথা মনে করিয়ে দিতে নিজেই পাঠ করলেন - লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
পাশে ছিলেন আনোয়ার ভাইয়ের
বোন । ভাবীকে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তেলাওয়াত করার অনুরোধ জানালেন।
আনোয়ার ভাইয়ের স্ত্রী শুরু করলেন, “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
হুয়াল্লা হুল্লাজী লা-ইলাহা................... বোনরে আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমাকে একটু শুইয়ে দে।”
ঘুমিয়ে পরলেন তিনি, তারপর অবচেতন হলেন, অতপর আল্লাহ তায়ালার দরবারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।
অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলো, ডাক্তার ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করলেন।
এটাকে বলা হয় একজন- সৌভাগ্যবতীর সৌভাগ্যময় মরণ।
কালেমা পড়ে মরণ, কোরআন তেলাওয়াত করতে করতে মরণ।
গতকাল এশার সময় বরিশালে লাশ নেওয়া হয়। গ্রামেই দাফন করা হলো।
আল্লাহ তায়ালা উনাকে জান্নাত নসীব করেন। ভুলত্রুটিকে মাফ করে দেন।
কত প্ল্যান , কত পরিকল্পনা, কত চিন্তাতে ব্যস্ত সময় আমাদের । জানা নাই কখন রশি টান পরে যায়।
হে আল্লাহ, তোমার কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমাদেরকে নেক আমাল করার তৌফিক দান করেন।
আমাদের পরিবার পরিজনদেরকেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাঁনোর চেষ্টা করার তৌফিক দান করেন।